জাতির মা খালেদা জিয়ার জন্য দেশব্যাপী প্রার্থনা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জিয়া পরিবারের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ও স্বাধীনতার রূপকার, তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। একাত্তরের স্বপ্নের বাংলাদেশের এই সংগ্রামী নেত্রীর জন্য আজ গোটা জাতি প্রার্থনা করছে।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার ও জিয়া পরিবারের ত্যাগ
শহীদ জিয়াউর রহমান বাকশালের একদলীয় শাসন বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। স্বাধীন গণমাধ্যমের শক্তি ফিরিয়ে দিয়ে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিতে সুদূরপ্রসারী সংস্কার চালান। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদে আখ্যায়িত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তিনি উন্নয়নের সোপানে তুলেছিলেন। এই সাফল্যেই আতঙ্কিত হয়ে দেশি-বিদেশি শক্তি ১৯৮১ সালের ৩০ মে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
স্বামীর শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়া যে অদমনীয় সাহস নিয়ে রাজনীতির ময়দানে এগিয়ে এসেছিলেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০০৭-০৮ সালের অমানবিক কারাবাস পর্যন্ত কোনো পরিস্থিতিই তাঁকে দমাতে পারেনি।
ফ্যাসিস্ট শাসনের নির্যাতন ও প্রতিরোধ
শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে জিয়া পরিবারের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছিল, "জেনারেল জিয়া একজন খুনি। তার স্ত্রী, ছেলেও তা-ই।" এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয় তাদের প্রতিহিংসার মাত্রা।
হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ কারাবাস এবং জেলে থাকা অবস্থায় তাঁকে 'স্লো পয়জনিং' করা হয়েছিল বলে অনেকের অভিযোগ। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার ফলে তিনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হন।
পরবর্তী প্রজন্মের ওপর নিপীড়ন
তারেক রহমান, যিনি দলের পুনর্গঠন ও গণতন্ত্রের জন্য জনপ্রিয় নেতা হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, ২০০৭ সালে রাতের অন্ধকারে আটক হয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন। রিমান্ডের নামে ইলেকট্রিক শক, শারীরিক নির্যাতন, শতাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও আরাফাত রহমান কোকোর ওপরও রাজনৈতিক প্রতিশোধ চালানো হয়। মায়ের কারাবাস, বড় ভাইয়ের নির্যাতন এবং দেশহীন জীবনের দুঃখে কোকো ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। নিজের দেশের মাটিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগের অধিকারও পাননি তিনি।
অবিচল থেকে দেশের সেবা
এত অন্যায়-অবিচারের পরও বেগম জিয়া দেশ ছেড়ে যাননি। পালালে হয়তো আজকের বাংলাদেশ অন্যরকম হতো। এক-এগারোর কঠিন সময়ে যদি তিনি দেশত্যাগ করতেন, দেশ দীর্ঘদিন বিদেশি প্রভাবের অধীনে বন্দি থাকত। তিনি থেকেছেন, লড়েছেন, ত্যাগ করেছেন, কিন্তু মাথা নত করেননি।
বর্তমান সংকট ও নিরাপত্তার প্রশ্ন
গত ২৩ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা তাঁর হার্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণ শনাক্ত করেছেন। এখন তিনি জীবনমৃত্যুর গভীর সংকটজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, অপহরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একজন জাতীয় নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, অতিমাত্রায় বিপজ্জনক।
জাতির প্রার্থনা ও একাত্মতা
আজ গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে শহরের ব্যস্ত মোড়ে দাঁড়ানো মানুষ সবাই এক সুরে দোয়া করছেন তাঁর সুস্থতার জন্য। রোজা রাখছেন, হাত তুলছেন আকাশের দিকে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগণ সবার কণ্ঠে একই প্রার্থনা।
রাজনীতির বিবাদ ভুলে আজ সবাই এক প্রার্থনায় একত্র হয়েছেন। কারণ বেগম খালেদা জিয়া কোনো সাধারণ রাজনীতিকের নাম নয়। তিনি একটি ইতিহাস, একটি অনুভূতি, একাত্তরের সংগ্রামী জাতির দীর্ঘ অভিযাত্রার প্রতীক।
সবার কণ্ঠে আজ একটাই মিনতি: 'বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসুন, আল্লাহ তাঁকে সুস্থতা দান করুন।'