দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে ৬০০ জনের মৃত্যু
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে প্রকৃতির রুদ্ররূপ দেখা দিয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টি ও পরপর কয়েকটি ঝড়ের আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি।
এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখো মানুষ। বহু এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক।
ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে বৃষ্টি শুরু হয় গত বুধবার। দেশটির আচেহ প্রদেশের বিরেউন এলাকার এক বাসিন্দা জানান, "বন্যার সময় সবকিছু ভেসে গেল। কাপড়চোপড় বাঁচাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাড়িটাই ধসে পড়ল।"
শনিবার পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় ৩০০ জনের বেশি এবং থাইল্যান্ডে ১৬০ জনের মতো মানুষ মারা গেছেন। মালয়েশিয়ায়ও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় 'সেনইয়ার' নামে এক ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ভয়াবহ ভূমিধস ও বন্যা সৃষ্টি করেছে। এতে হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তলিয়ে যায় এবং বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
থাইল্যান্ডে রেকর্ড বৃষ্টিপাত
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সংকলা প্রদেশে বন্যার পানির উচ্চতা ৩ মিটার (১০ ফুট) পর্যন্ত উঠে যায়। এতে সেখানে অন্তত ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি গত এক দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।
হাট ইয়াই শহরে এক দিনে ৩৩৫ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ৩০০ বছরে সর্বোচ্চ। স্থানীয় এক হাসপাতালে মরদেহ রাখার জায়গা না থাকায় সেগুলো রেফ্রিজারেটেড ট্রাকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা
শ্রীলঙ্কায় সাইক্লোন 'দিতওয়ার' আঘাতে ১৩০ জনের বেশি নিহত এবং ১৭০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন। দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ১৫ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং ৭৮ হাজারের মতো মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
আবহাওয়াবিদদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই চরম আবহাওয়া সম্ভবত ফিলিপাইনের টাইফুন কোতো ও মালাক্কা প্রণালিতে বিরল সাইক্লোন সেনইয়ারের প্রভাবে তৈরি হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে। বৃষ্টি এখন আরও তীব্র, দীর্ঘস্থায়ী ও ঝোড়ো হয়ে উঠছে। আর এটিই মূলত বন্যা ও ঝোড়ো হাওয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতির সামনে মানুষ কতটা অসহায়। তবে এমন পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই রয়েছে মানবিক মুক্তির পথ।